★ভারতের মুসলমান সমাজের উন্নতির পথে প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার৷ ★
<><><><><><><><><><><><><><><><
★ আমাদের ভারতে মুসলমান সমাজের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সমস্যগুলোকে যদি পর্যালোচনা করা হয় তাহলে আমরা কি দেখতে পাব ? যা প্রদর্শিত হবে তা কহতব্য নয় এবং শ্রুতি মধুরও নয়৷
★ আমার সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে যা দৃষ্টিগোচর হয়েছে তা হল এই যে—
তথাকথিত হিন্দু সমাজে বা ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজে নেতৃত্বের পদ অলংকৃত করছে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণরা৷ তাদের ধর্মীয় নেতাও ব্রাহ্মণ আর তাদের সামাজিক তথা রাজনৈতিক নেতারাও ব্রাহ্মণ৷ ফলে তাদের উন্নতি অথবা অবনতি সর্ব বিষয়েই সাফল্য অথবা ব্যর্থতা পুরোপুরিভাবে ব্রাহ্মণরাই দায়ী৷ কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রে সমস্যাটি আরো জটিল এবং গভীরমূল৷
★★ আমরা সুস্পষ্টভাবে পরিদর্শন করছি যে, মুসলমান সমাজের বৃহত্তর অংশ অশিক্ষিত বা নিরক্ষর৷ আর ঐ অশিক্ষিত মানুষদেরকে তিনটি গ্রুপ বা গোষ্ঠী মিলে পরিচালনা করছে৷
(1) মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়সমূহে যা যা বলার তা বলেন বিভিন্ন স্তরের ধর্মীয় নেতৃত্ব৷
(2) মুসলমান সমাজে নানাধরনের ছোট বড় সমস্যা এবং রাজনৈতিক বিষয়গুলো পরিচালিত হয় আধুনিক শিক্ষিত ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের নেতৃত্বে৷
(3) বর্তমান ভারতে সমাজ ও রাষ্ট্র সর্ববিষয়ে ক্ষমতা ও নেতৃত্বের অধিকারী এবং আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও মিডিয়া সর্ব বিষয়ে ব্রাহ্মণরাই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী৷ এই ব্রাহ্মণরা নিম্নবর্ণের লোকদেরকে ও পরিচালনা করে এবং গোটা দেশ ব্যাপী মুসলমানদেরকেও পরিচালনা করে থাকে৷ আর মুসলমানদের জেনারেল শিক্ষিত গ্রুপটির পশ্চাতে আছে ব্রাহ্মণরাই৷
★★★ আমার মতামত হল, শূদ্র, অস্পৃশ্য ও আদিবাসী (Sc, St, Obc) সমাজের উন্নতির জন্য শুধুমাত্র ব্রাহ্মণরা ইচ্ছা করলেই তাদের উন্নতি করতে পারে৷ আর যদি ব্রাহ্মণরা শূদ্রদের উন্নতি না করে অথবা প্রতারণা করে অথবা শুদ্র সমাজকে শোষণ করে তাহলেও শূদ্রদের শোষক ও প্রতারক হিসাবে শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠী ব্রাহ্মণরাই চিহ্নিত হবে৷ কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রে বিপদ এইখানে ত্রিগুণ৷
প্রথমতঃ,
(1) ধর্মীয় নেতা হিসাবে আলেম-মৌলুবী-মওলানা সাহেবগণ৷
দ্বিতীয়তঃ
(2) উচ্চশিক্ষিত সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠিত মুসলিম নেতৃবর্গ৷
তৃতীয়তঃ
(3) ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতৃত্ব৷
★★★★ উপরোক্ত পর্যালোচনাটি যারা স্বীকার করতে প্রস্তুত নয় তাদের উদ্দেশ্যে আমার কোন কিছু বলার নেই৷ কিন্তু যারা এটি মান্য করবে তাদের অবগতির জন্য বলছি যে, ডঃ আম্বেদকর বলেছেন—" ব্রাহ্মণরা কোন কালেও সমাজ সংস্কারে আগ্রহী নয়৷ কারণ তারা জানে যে শূদ্র সমাজের উন্নতির অর্থ হল ব্রাহ্মণদের সমূহ ক্ষতি৷" শূদ্ররা উচ্চশিক্ষিত হলে, শূদ্ররা সম্পদশালী হলে, তারা ব্রাহ্মণদের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবেনা৷ বরং তারা স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হবে৷ তারা ব্রাহ্মণদের গোলাম হয়ে থাকবেনা৷ সেই জন্য ব্রাহ্মণরা চিরদিনই সমাজ সংস্কারের বিরোধী৷
★★★★ ঠিক তদ্রুপ, মুসলমান সমাজের উন্নয়ণে উপরোক্ত তিনটি গোষ্ঠির সমর্থন ও সহযোগিতা অবশ্যই প্রয়োজন৷ ঐ তিনটি গোষ্ঠীর সমর্থন না থাকলে মুসলমান সমাজের উন্নয়ণ সম্ভব নয়৷ কিন্ত ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে, মুসলমান সমাজের উন্নয়ণে উপরোক্ত তিনটি গোষ্ঠি আন্তরিক নয়৷ সেই জন্য মুসলমান সমাজের উন্নয়ণ হয় নি৷ ব্রাহ্মণরা মুসলমান সমাজে বাইরের লোক৷ (1) আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে একথা বলতে পারি যে, মুসলমান সমাজে ধর্মীয় নেতারা মুসলমানদের উন্নতির প্রতি আন্তরিক নয়৷ সেই জন্য মুসলমান সমাজের উন্নতির জন্য মওলানা-মৌলুবীদের নিকট কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই এবং মৌলুবী-মওলানাগণ ঐক্যবদ্ধ নয়, দায়িত্বশীল নয় এবং আধুনিক যুগোপযোগী যোগ্যতা সম্পন্নও নয়৷ (2) উচ্চশিক্ষিত মুসলমান নেতা এবং বুদ্ধিজীবীরাও মুসলমান সমাজের উন্নতির প্রতি আন্তরিকভাবে ও দায়িত্বশীল নয়৷ সেই জন্য মুসলমান সমাজের উন্নয়ণে মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের নিকট ও কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই এবং মুসলমান বুদ্ধিজীবীরাও ঐক্যবদ্ধ নয়৷ (3) বাকী রইল ব্রাহ্মণরা৷ ডঃ আম্বেদকরের মতে ব্রাহ্মণরা বিদেশী এবং তারা তাদের হিন্দু নামে পরিচিত শূদ্রদেরকেই হিন্দু হিসাবে, ভাই হিসাবে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়৷ তারা শূদ্র সমাজকে শিক্ষার অধিকার দেয়নি, মন্দিরে প্রবেশ করতে দেয়নি৷ গায়ে গা ঠেঁকিয়ে বসতে নেয়নি৷ তারা তাদের স্বধর্মীয় দেরকে ভাই হিসাবে মান্যতা দিতে রাজি নয়৷ তারা আবার সেই মুসলমানদের উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে ? যারা মাত্র 500, 700 বছর পূর্বে ব্রাহ্মণদের অসাম্যমূলক হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে সাম্যের ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছিল৷ এটি একটি অনৈতিহাসিক এবং অবাস্তব কল্পনামাত্র৷ এ আশা পূর্ণ হওয়া অসম্ভব৷
★★★★★ তাহলে এই জটিল রোগের চিকিৎসা কি ? আমার মতে, এই জটিল রোগেরও সুচিকিৎসা আছে৷ সেটা কি ? উদাহরণ স্বরূপ— ডঃ আম্বেদকর ব্রাহ্মণদের বর্জন করেই শূদ্র ও অস্পৃশ্য সমাজের উন্নতি ঘটিয়েছেন৷ শূদ্র সমাজের উন্নয়ণে ব্রাহ্মণরা সহযোগিতা তো করেইনি বরং প্রচণ্ডভাবে ডঃ আম্বেদকরকে বাধা দিয়েছিল৷ এমনকি গান্ধীজি নিজেও শূদ্রদের উন্নয়ণে প্রচণ্ডভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন৷ তবুও ব্রাহ্মণরা ডঃ আম্বেদকরকে প্রতিরোধ করতে পারেনি৷ বরং ডঃ আম্বেদকর ব্রাহ্মণদেরকে বর্জন করেই শূদ্র সমাজের মধ্যে একটি বিকল্প নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ তবেই তিনি শূদ্র তথা অস্পৃশ্য ও আদিবাসী ( Sc, St, Obc) সমাজের উন্নয়ণ ও কল্যাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ তদ্রুপ মুসলমান সমাজের উন্নয়ণে (1) আলেম-মৌলুবী, (2) উচ্চশিক্ষিত মুসলমান ও (3) ব্রাহ্মণ এই তিনটি গোষ্ঠীকে বর্জন করে একটি বিকল্প নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে৷ যারা ব্রাহ্মণও নয় আর মৌলুবীও নয় এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী মানসিকতা সম্পন্নও নয়৷ বরং তারা ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী এবং ইসলামের গভীর জ্ঞানের অধিকারী এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, অর্থনীতি ও রাজনীতিসহ আরো বহু বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবে৷ এই কাজটি অত্যন্ত সোজাও নয় আবার অসম্ভবও নয়৷ যারা আজকের ভারতে মুসলমান সমাজের উন্নতির জন্য চিন্তা-ভাবনা করছেন তাঁদেরকে অসম্ভব ধরণের মনোবল সম্পন্ন, আপোষহীন সংগ্রামী ও সমাজদরদী স্তরের মানুষ হওয়া অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়৷
খোদা হাফেজ৷
সর্বদা ন্যায়েরই জয় কাম্য৷
সর্বদা ন্যায় ও সত্যপন্থীরাই বিজয়ী হয়৷