মূলনিবাসী মিশন
  ব্রাহ্মণ্যবাদ
 
ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণ্যবাদ ও ভারতীয় গণতন্ত্র
 
*************************************
      ★    সর্বপ্রথম কথা হল ব্রাহ্মণরা বিদেশী৷ সমস্ত প্রামাণ্য ইতিহাস বলছে,  ব্রাহ্মণরা ইউরোপ থেকে আগত ভারত আক্রমণকারী৷ সেই জন্য তাদেরকে বলা হয় ইউরেশিয়ান ব্রাহ্মণ৷ 
 
         ব্রাহ্মণরা বিদেশ থেকে এসে ভারত আক্রমণ করার পর অশ্ব ও লৌহ অস্ত্রের সাহায্যে আমাদের তৎকালীন পূর্ব- পুরুষদেরকে মেরে-কেটে, হত্যা করে,  তাদের ঘরবাড়ী লুণ্ঠন করে, তাদেরকে পরাজিত করে আমাদের ভারতের শাসক হয়ে বসল৷ তারা ধর্মের নামে যে বিধান রচনা করল সেগুলি হল— বেদ, পুরাণ, গীতা, মনুস্মৃতি, উপনিষদ, রামায়ণ ও মহাভারত প্রভৃতি৷ ঐ সমস্ত ধর্মগ্রন্থগুলো ব্রাহ্মণরা নিজেরা রচনা করে ঈশ্বরের রচনা বলে চালিয়ে দিল৷ ঐ সমস্ত গ্রন্থে সকল মানুষের মর্যাদা সমান নয় এবং  সকলকে উঁচু-নিচু, বড়-ছোট, ছ্যুৎ-অচ্ছুৎ, বড়জাত-ছোটজাত, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ প্রভৃতি  4 টি বর্ণে ও হাজার-হাজার জাতে বিভক্ত করে মানবজাতিকে ধর্ম-স্বীকৃত বৈষম্যের ভিত্তিতে বহুধা বিভক্ত করে রেখেছে৷ এই বর্ণবাদী ব্যবস্থায় সব মানুষ সমান নয়৷ নারী-পুরুষ সমান নয়৷ উচ্চবর্ণ নিম্নবর্ণ সমান নয়৷ স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য সমান নয়৷ এই রকম একটি বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থাকে ডঃ আম্বেদকর ধর্ম হিসাবে মানতেই রাজী হননি৷ তাদের ধর্মে সাম্য নেই, গণতণ্ত্র নেই৷ তাদের ধর্মগ্রন্থে সাম্য নেই, গণতণ্ত্র নেই৷ তাদের প্রাচীন ইতিহাসে সাম্য নেই, গণতণ্ত্র নেই৷ তাদের মস্তিষ্কে সাম্য, গণতণ্ত্র, ঐক্য, ন্যায়, মানবতা, শান্তি, সমৃদ্ধি কোন কিছু বর্তমানেও নেই, আর কোন কালেও ছিল না৷ 
 
        ★★   ডঃ আম্বেদকর বলেছেন— 
হিন্দু ধর্মের মূলে আছে ব্রাহ্মণ্যবাদ৷ আর ব্রাহ্মণ্যবাদের মূলনীতি হল তিনটি৷ (1) অসাম্য, (2) বিভেদ ও (3) শোষণ৷ এই অসাম্য ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রচারক হল ব্রাহ্মণরা৷ আর তাদের মস্তিষ্কে আছে বেদ, গীতা ও মনুস্মৃতি৷ অতএব মনুবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ একই জিনিস৷ তারা সাম্যনীতিকে মানতে প্রস্তুত নয়৷ ইতিহাস বলছে, তারা কয়েক হাজার বছর ধরে অগণতাণ্ত্রিকভাবে ভারতের মূলনিবাসীদের উপর শাসন ও শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে এই বেদ ও মনুস্মৃতির বিভেদমূলক আইনের সাহায্যে৷ ফলে তাদের শাসনে ভারতে তারা কোনদিন সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও গণতাণ্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারেনি৷ 
 
      ★★   আধুনিক ভারতে ইংরেজদের  নেতৃত্বে যে শাসন ব্যবস্থা চালু হয় এবং 1947 সালে স্বাধীনতার পর যে গণতাণ্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু হয় ওটা হল পাশ্চাত্য দার্শনিকদের প্রচারিত ইউরোপিয় গণতণ্ত্র৷ ঐ ইউরোপিয় গণতণ্ত্রের মূল ভিত্তিই হল সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা৷ যেটা 1789 সালে ফরাশী বিপ্লবের পর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল৷ ইতিহাস বলছে যে, ভারতের ব্রাহ্মণরা নিজেদেরকে হিন্দু বলতে প্রস্তুত ছিলনা৷  1917 সালে ইংল্যাণ্ডে (adult franchise ) বা প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকার আইন চালু হলে  তারপর থেকে ব্রাহ্মণরাও নিজেদেরকে হিন্দু বলা শুরু করে এবং হিন্দু মহাসভা, বিশ্বহিন্দু পরিষদ প্রভৃতি হিন্দু ভিত্তিক শব্দগুলোর ব্যাপক প্রচলন শুরু করে৷ তারপূর্বে 1875 সালে হিন্দু সমাজ নয় বরং আর্যসমাজ, আর্য নারী প্রভৃতি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে৷ তার পূর্বে ব্রাহ্মণরা নিজেদেরকে আর্য বা আর্য সন্তান বলতে গর্ববোধ করত৷ পরে তারা হিন্দু নাম ধারণ করে৷  1947 সালের পর থেকে হিন্দু, হিন্দুত্ব, হিন্দু রাষ্ট্র, রাম, রামমন্দির, রামরাজ্য, রামজন্মভূমী প্রভৃতি যোগ বিয়োগ করে তারা রাজ্য, রাজা, রাজত্ব সবকিছু দখল করে৷ তারা মাত্র 15 % আর্য হয়েও 85 % মূলনিবাসী জনগণের উপর অবাধে রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে৷ 
 
       ★★★     বর্তমান ভারতে যে গণতণ্ত্র প্রচলিত আছে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা সেই গণতণ্ত্রকে আন্তরিকভাবে মানতে নারাজ৷ সেই জন্য তারা গণতণ্ত্রপ্রেমী ডঃ আম্বেদকরের বিরোধী এবং ডঃ বি আর  আম্বেদকরের লিখিত সংবিধানেরও বিরোধী৷ তারা সাম্য চায়না, তারা গণতণ্ত্র চায়না, তারা সকল মানুষের স্বাধীনতাও চায়না৷ তারা শুধু চায় ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ৷ আর ব্রাহ্মণ্যবাদ মানে হল কেবলমাত্র ব্রাহ্মণরাই শ্রেষ্ঠ৷ তারা চায় তাদের শ্রেষ্ঠত্ব, নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও রাজত্ব৷ ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য হল এই যে, প্রাচীনকালে আর্য ব্রাহ্মণরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে শক্তির জোরে, ধারালো অস্ত্রের জোরে, যুদ্ধ করে পরাজিত করে রাজত্ব দখল করেছিল৷ ইতিহাসের পরিহাস এই যে— আজ গণতণ্ত্রের যুগে, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ 85 % জনগণ হয়ে, শিক্ষিত হয়ে, শত্রুকে চিহ্নিত করার পরও আমাদের পরিচিত শত্রু দলগুলোকে অর্থাৎ ব্রাহ্মণ্যবাদী দলগুলেকে নিজেরা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে, তাদেরকে চাঁদা দিয়ে, তাদের হয়ে শ্লোগান দিয়ে, নিজ হাতে বোতাম টিপে, তাদেরকে বিজয়ী করে, নিজেদের মাথায় লাল বা সবুজ আবীর মেখে আনন্দ উপভোগ করছি৷ ছিঃ, ছিঃ, ছিঃ৷ ডঃ আম্বেদকর বলে গেছেন— " slaves enjoying slavery "  অর্থাৎ গোলামরা গোলামী করেই আনন্দ লাভ করে৷ এখন আমাদেরকে স্থির করতে হবে যে, এই রকম আত্মঘাতী খেলা আর কতদিন ? আমাদের কি সুমতির উদয় হবে না ? 
 
        ★★★★    আজ আমাদেরকে ভেবে দেখতে হবে যে— যেই ব্রাহ্মণরা ভারতীয় নয়, যারা বিদেশী আক্রমণকারী, যারা সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা কোন কিছুতেই বিশ্বাস করেনা, যারা গৌতম বুদ্ধের ন্যায়, শান্তি, করুণায় বিশ্বাস করেনা, যারা অহিংসায় নয় বরং হিংসায় বিশ্বাসী, যারা জাত-পাত, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, রক্তপাত, দুর্নীতি, কেলেংকারী, খুন, খারাবী, হত্যা, নারী মাত্রেই শূদ্রাণী, নারীর অপমান, নারী হত্যা, বধু হত্যা, সতীদাহ, নারী ধর্ষণ, নারীর দেহ ব্যবসা, সূদ, ঘুষ, মদ, গাঁজা, প্রভৃতি অসামাজিক ও বৈষম্যমূলক আইন-কানুনে অভ্যস্ত এবং বিশ্বাসী তাদের হাতে এতবড় বিশাল ভারতের শাসন ক্ষমতার দায়-দায়িত্ব তুলে দিলে তারা কিভাবে সাফল্যের সঙ্গে এই দেশ পরিচালনা করবে ? অসম্ভব৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা পার্টীর হাত বদল হবে এবং শুধুমাত্র ব্রাহ্মণরাই মুখ্যমণ্ত্রী বা প্রধানমণ্ত্রী হবে৷ কিন্তু ডঃ আম্বেদকরের লিখিত সাম্যভিত্তিক ও বিশ্বশ্রেষ্ঠ  সংবিধান পরিচালনা করার যোগ্য তারা নয় তার প্রমাণ বিগত 69 বছরে আমরা বারবার পেয়েছি৷ আর নয়৷ তাদেরকে এই গুরুদায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার মণ্ত্রে উদ্বুদ্ধ একদল দেশপ্রেমিক, সমাজসেবী, উদারনৈতিক,  ও ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবের সুনাগরিকদের হাতে, এক কথায় আম্বেদকরবাদীদের হাতে এই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দিতে হবে৷ আর মুসলমানরা যদি মনে করে যে, মুসলমানরাই ভারত শাসন করার যোগ্য,   তাহলে সর্বপ্রথমে মুসলমান সমাজকে শিক্ষিত ও সংগঠিত হয়ে অ-মুসলিমদের  নিকট বিশ্বাস অর্জন করে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে৷ আমার মতে— এই মুহূর্তে ভারতে ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের মোকাবেলা করার সর্বাধিক যোগ্য মুসলমানদের তুলনায় শূদ্র-অস্পৃশ্য ও -আদিবাসীরা৷ যাদেরকে বলা হয় তফসিলী জাতি Sc, /তফসিলী উপজাতি St, /অনগ্রসর শূদ্র Obc জাতি৷ আর এই মহাপরিবর্তনের কাজে মুসলমানরা তাদেরকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করবে৷ এরাই হল ভারতের মূলনিবাসী জনগণ৷ 
 
★ মূলনিবাসী জনগণের জয় হোক—
জয় মূলনিবাসী৷
 
  Today, there have been 1 visitors (7 hits) on this page! Mulnivasi  
 
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free