★ গণতণ্ত্র ও ভারতের জনগণ৷ ★
*************************************
★ আমাদের বর্তমান ভারতে গণতণ্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত আছে এ কথাটি আজ সর্বজনবিদিত৷ আমাদের দেশে
গণতাণ্ত্রিক ব্যবস্থা আছে বলেই প্রতি 5 বছর অন্তর নির্বাচন হয়৷ পৃথিবীতে বহু দেশ আছে, সেই সমস্ত দেশে 50/100 বছরেও নির্বাচন হয়না৷ কারণ সেই সমস্ত দেশে গণতাণ্ত্রিক ব্যবস্থার প্রচলন নেই৷
★ পণ্ডিতদের মতে গণতাণ্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অন্যান্য সমস্ত ব্যবস্থা অপেক্ষা অনেক উন্নত ব্যবস্থা৷ রাজতণ্ত্র, সমাজতণ্ত্র, একনায়কতণ্ত্র প্রভৃতি সমস্ত তণ্ত্রই গণতণ্ত্র অপেক্ষা নিকৃষ্টতর৷ কিন্তু এর পরপরই পণ্ডিতরা আরো একটা কথা বলেন, তা হল এই যে— " সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতণ্ত্র ব্যতীত কেবলমাত্র রাজনৈতিক গণতণ্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে৷ "
★★ আমাদের ভারতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতণ্ত্র নেই, কেবলমাত্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গণতণ্ত্র আছে৷ ভারতীয় সমাজব্যবস্থা জাত-পাতে দীর্ণ৷ এখানে ইউরোপের মত বা মুসলিম দেশগুলোর মত একটি সমাজের লোক বাস করেনা৷ যেমন, হিন্দু সমাজ৷ হিন্দু সমাজে আছে কয়েকটি বর্ণ৷ যেমন— ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র৷ আর আছে কয়েক হাজার জাত৷ যেমন— তেলী, তাম্বোলী, দুলে, বাগদী, ক্যাওরা, ডোম, ধীবর, চাষী, সৎচাষী, কর্মকার, কুম্ভকার, মাহিষ্য, গোপ, সগগোপ, যাদব, সাঁওতাল, নাপিত প্রভৃতি৷ ভারতে বর্তমানে শূদ্রদের মধ্যে জাতের সংখ্যা হল প্রায় সাড়ে 6 হাজার৷ প্রবাদ বাক্যে বলা হয়, বারো ঘর তেরো হাঁড়ী, কেউ যায় না কারো বাড়ী৷ ডঃ আম্বেদকর জাতব্যবস্থাকে তুলনা করেছেন " সেই বহুতল অট্টালিকার সঙ্গে যেই বহুতল অট্টালিকায় কোন সিঁড়ি নেই৷ " অর্থাৎ যে নিচের তলায় আছে সে দ্বিতীয় তলে বা তৃতীয় তলে কখনো যেতে পারবেনা৷ আর যে চতুর্থ তলে বাস করছে সে কখনো নীচের তলায় নামতে পারবেনা৷ যে যেখানে জন্মেছে সে সেখানেই চিরদিন থাকতে বাধ্য হবে৷ এই হল সিঁড়িবিহীন অট্টালিকার মর্ম৷ এই হল ভারতীয় হিন্দু সমাজের আভ্যন্তরীণ চিত্র৷
★★ বর্তমানে আমরা স্বচক্ষে দেখছি যে, আমাদের ভারতে রাজনীতিতে গণতণ্ত্র আছে কিন্তু সমাজে এবং অর্থনীতিতে গণতণ্ত্র নেই৷ কারণ হল, একজন গরীব, অশিক্ষিত, অস্পৃশ্য ও শূদ্র সমাজের মানুষ৷ সামাজিকভাবে তার কোন মর্যাদা নেই, কারণ সে দুলে, বাগদী, ডোম, ক্যাওরা৷ অতএব সে ছোটজাত, সে অস্পৃশ্য, সে পাশে বসার অযোগ্য৷ আবার অর্থনৈতিকভাবে সে গরীব, তার পাকাবাড়ী নেই, তার নিজস্ব গাড়ী নেই৷ তার কোন জমি-জায়গা নেই৷ অতএব এই ধরণের মানুষরা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে গণতাণ্ত্রিক সুযোগ লাভ করতে পারেনা৷ ৷ তাহলে ভারতে যে গণতণ্ত্র আছে এটা শূদ্র, অস্পৃশ্য, আদিবাসী ও মুসলমান সমাজের কল্যাণের জন্য নয়৷ তাই আমরা সংখ্যায় 85 % হয়েও মাত্র 15 % ব্রাহ্মণদের নিকট গোহারা হেরে যাচ্ছি৷ পণ্ডিতরা যেটা আশংকা করেছিলেন ভারতে সেটাই ঘটে চলেছে৷
★ শুধু ভোট দেওয়ার বা ভোটে প্রার্থী হওয়ার অধিকার থাকলেই হবেনা বরং ভোটে বিজয়ী হওয়ার পক্ষে অনুকূল পরিবেশও থাকতে হবে, ভারতে সেটা একেবারেই নেই৷ আর নেই বলেই শূদ্র, অস্পৃশ্য, আদিবাসী এবং মুসলমানরা ব্রাহ্মণদের দলের টিকিটে প্রার্থী হলেই লক্ষাধিক ভোটে বিজয়ী হয় আর তাদের নিজেদের শূদ্র-অস্পৃশ্য-আদিবাসী-মুসলমান পরিচালিত দলের টিকিটে প্রার্থী হলে জামানত জব্ত হয়ে গো-হারাণ হেরে যায়৷ এর কারণ লুক্কায়িত আছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গণতণ্ত্রের অনুপস্থিতি৷ এই বিষয়টি নিয়ে শূদ্র, অস্পৃশ্য, আদিবাসী ও মুসলমান বুদ্ধিজীবীদের অবশ্যই ভাবনা-চিন্তা করতে হবে৷
★★★ তাহলে উপায় কি ? উপায় হল— তফসিলী জাতি Sc , তফসিলী উপজাতি St , অনগ্রসর শূদ্র Obc এবং Minorities মুসলমান, খৃষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন প্রমুখ অশিক্ষিত, গরীব, অনগ্রসর সমাজের সন্তান-সন্ততিদেরকে কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে দল, পার্টী, সংগঠন ও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে৷ তারপর সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে polarization করে এবং দলিত-মথিত-নির্যাতিতদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে গণতাণ্ত্রিক নির্বাচনে 85 % মানুষদেরকে সংঘবদ্ধ করে জন্মজাত শাসকদের মোকাবেলা করতে পারলে তবেই ভোটের ফলাফল আমাদের পক্ষে আসবে৷ ইউরোপ আমেরিকার মত নির্বাচনের পূর্বে জনমত সমীক্ষায় সমস্ত ব্রাহ্মণ্যবাদী দলের প্রার্থীরা পরাজিত হবে কারণ তাদের ভোটার মাত্র 15 % জনগণ৷ আর আমাদের নিপীড়িত-নির্যাতিত ভোটারদের সংখ্যা 85 % জনগণ৷ এই বিশাল কর্মকাণ্ড সফলভাবে করতে পারলে তবেই আমাদের ভারতে গণতণ্ত্র সফল হবে৷ ভারতে শূদ্র আর মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ব্যতীত এই ইউরোপীয় গণতণ্ত্র বিগত 69 বছরে কার্যকর হয়নি আর আগামী 100 বছরেও কার্যকর হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই৷
★★★ আমার বন্ধুদের নিকট আবেদন— যে আমার এই পোষ্ট টির বিষয়ে আপনারা আপনাদের মূল্যবান মতামত দিয়ে সমাজকে উপকৃত করবেন৷