বুদ্ধিজীবীদের নিকট থেকে আমরা একটা কথা বারবার শুনে থাকি যে, " ভারতের সংবিধান পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান৷ "
উপরোক্ত দাবীর ভিত্তিতে আমরা বলতে চাই যে, ভারতসহ পৃথিবীর সমস্ত দেশের বুদ্ধিজীবীদের মতে— " ভারতের সংবিধান পৃথিবীর লিখিত সংবিধানগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান ৷ " তাহলে ভারতের স্বাধীনতা লাভ হয়েছে 68 বছর অতিক্রান্ত৷ অথচ এখন পর্যন্ত ভারত ও ভারতীয় জনগণের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, চিন্তাগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা, মানবীয় মূল্যবোধ প্রভৃতি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ণ বা মৌলিক পরিবর্তন না হওয়ার কারণ কি ? সেই বিষয়ে আমাদের আন্তরিকভাবে চিন্তাভাবনা করা একান্ত প্রয়োজন৷
আমরা আরো একটি কথা উল্লেখ করতে চাই যে, ভারতের সর্বস্তরের জনগণের উন্নয়ণের দলীল হল ভারতের সংবিধান৷ সংবিধান অনুসারে দেশ এবং সমাজ পরিচালিত হবে তবেই দেশ এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ণ ও কল্যাণ সাধিত হবে৷ দেশের সংবিধান যখন সর্বশ্রেষ্ঠ তখন জনগণের উন্নয়ণ ও কল্যাণ হওয়ার পথে কোন প্রকারের আইনগত বাধা থাকতে পারেনা৷ তাহলে এ প্রশ্ন উঠতেই পারে যে— (1) আমাদের দেশ স্বাধীন, (2) আমাদের দেশ এখন আর বিদেশীদের দ্বারা পরিচালিত নয়,
(3) আমাদের দেশের সংবিধান পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান ৷
(4) আমাদের দেশ পৃথিবীর একটি সুপ্রাচীন সভ্যতার (সিন্ধু সভ্যতা) উত্তরসূরী ৷
এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য থাকা সত্বেও আমাদের দেশের বা আমাদের সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়ণ হলনা কেন ? যারা বলছে দেশ উন্নতির দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে তাদেরকে জানাতে চাই যে, দেশের মাত্র 15% উচ্চবর্ণের লোকজনের উন্নতি হয়েছে৷ সর্বস্তরের মানুষদের হয়নি৷ হিন্দু ধর্মের শূদ্র সমাজের এবং মুসলমান, খৃষ্টান, শিখ, বৈৌদ্ধ, জৈনদেরও উন্নতি হয়নি৷ সেই জন্য ড: আম্বেদকর বলেছ্লেন, দেশের স্বাধীনতা আর দেশবাসীর স্বাধীনতা এক নয়৷ এখন সেকথায় প্রমাণিত হল৷
প্রসঙ্গক্রমে আরো একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন সকলেরই মনে উঁকি দিতে আরম্ভ করেছে তা হল এই যে, আমাদের দেশের সংবিধান পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান একথা জানার পর দেশের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে শতকরা কত জন ব্যক্তি নিজ দেশের পূর্ণাঙ্গ সংবিধান পাঠ করেছে ? কতজন ব্যক্তি স্বচক্ষে চাক্ষুস করেছে বা দেখেছে ? আমি আমার সীমিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলতে চাই যে, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেরে শুরু করে স্নাতক বা মাষ্টার ডিগ্রী প্রাপ্ত শিক্ষিত মানুষদের শতকরা 5% মানুষরা ভারতের সংবিধান পড়েনি৷ বাদবাকী যে সমস্ত শিক্ষিত মানুষরা পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা কি ভারতের সংবিধান স্বচক্ষে দেখেছে ? এই জটিল প্রশ্নের উত্তর এক কথায় হল- না,না,না৷
অত্যন্ত দু:খ ও পরিতাপের বিষয় এই যে, যেই দেশটি স্বাধীন, যেই দেশের জনগণের অধিকাংশই হয় অশিক্ষিত, নয় তো অল্প শিক্ষিত সেই দেশের উচ্চশিক্ষিত মানুষরা বা বুদ্ধিজীবীরা যদি নিজ দেশের সংবিধানকেই না পড়ে বা জনগণের উন্নয়ণের দলীলকেই পড়তে, জানতে, বুঝতে আগ্রহী হতে না চায়, তাহলে অজ্ঞ, অশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত মানুষরা তো কোনদিনই ভারতের সংবিধান পড়বেনা আর দেখবেওনা৷ বাস্তব অবস্থা যদি এই হয় তাহলে দেশ এবং জনগণের উন্নতি হবে কিভাবে ? ভারতের সংবিধান প্রণেতা ড: বি, আর, আম্বেদকর বলেছেন— " একটি দেশের সংবিধান উন্নত ও সুন্দর হলেই সেই দেশের কল্যাণ ও উন্নতি হয়ে যাবেনা৷ দেশের মানুষের উন্নতি ও কল্যাণের জন্য প্রথম শর্ত হল দেশের শাসকদের মন, মস্তিষ্ক, সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা৷ "
যারা দেশ পরিচালনা করছে, যারা বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত তারা কেন সংবিধান পড়েনা ? তারা কেন আইন কানুনের ধার দিয়ে চলেনা ? এর একটাই উত্তর হল, শাসক বা বুদ্ধিজীবীরা দেশের উনগণের উন্নয়ণের প্রতি আন্তরিক নয়৷ তাহলে আমাদের সামনে পথ কি ? পথ একটাই৷ তা হল, নিজেরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করে ঐ শাসক ব্রাহ্মণ জাতির লোকদেরকে এবং বুদ্ধিজীবীদেরকে বয়কট বা অস্বীকার করে নিজেরা ভারতের সংবিধান পড়ে,সংগঠন তৈরী করে, রাজনৈতির পার্টী গঠন করে ক্ষমতার মসনদ দখল করা৷ আমার মতে এর কোন বিকল্প নেই৷ এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আমরা যত সত্বর শুরু করতে পারব তত সত্বর আমরা উন্নতি লাভ করতে পারব৷
দেশের সমস্ত বুদ্ধিজীবীদেরকে আন্তরিকভাবে ভাবনা-চিন্তা করতে অনুরোধ জানিয়ে আমার আলোচনা সমাপ্ত করছি৷
(Collected from Facebook)